স্কুল সরকারি হলেও চলে বেসরকারি শিক্ষক দিয়ে। ৯টি পদের বেশির ভাগই শূন্য। শিক্ষক না থাকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভর্তি করার আগ্রহ হারাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে একশ’ আসনের বিদ্যালয়টিতে ভর্তি আছে মাত্র ৪৭ জন শিক্ষার্থী। বছরজুড়ে ফাঁকা থাকছে অর্ধেকেরও বেশি আসন।
এমন চিত্রই পাওয়া গেছে ঝিনাইদহ সরকারি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আবাসিক বিদ্যালয়ে। প্রতিষ্ঠানটি ৯ বছরেও পরিপূর্ণ সেবা দিতে পারছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৮ এপ্রিল ঝিনাইদহ পৌরসভার মহিষাকুন্ডু এলাকায় ৯ বিঘা জমির উপর খুলনা বিভাগের একমাত্র সরকারি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আবাসিক বিদ্যালয়টির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ভবনটি নির্মাণে গণপূর্ত বিভাগের ব্যয় হয় ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোটায় ২৮৫ প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বাবলম্বী করতে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. মসিউর রহমানের হাত ধরে। তিনি এই প্রতিষ্ঠান স্থাপনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের গার্মেন্টস অ্যান্ড অ্যামব্রয়ডারি, ফেন্সি উড ওয়ার্কসহ চার বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এখানে আবাসিক ও একাডেমিক মিলিয়ে রয়েছে মোট ৫টি ভবন। এরমধ্যে লোকবল না থাকায় স্টাফ কোয়াটার ও অফিসার্স কোয়াটার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ভবন দুটির জানালা, দরজা ও ইলেক্ট্রনিক কাঠামো ও সংযোগ সংস্কারের প্রয়োজন। ঘাস জঙ্গলে ভবন দুইটি ছেয়ে গেছে, নেই পরিষ্কারের কোনো উদ্যোগ।
এদিকে ২০১৫ সালে জোড়াতালি দিয়ে সরকারি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আবাসিক বিদ্যালয়টি শুরু হলেও ২০২০ সাল থেকে অনাবাসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তি শুরু হয়। কিন্তু তাদের পড়ানোর কোনো প্রশিক্ষক নেই। বাইরে থেকে তিনজন প্রশিক্ষককে খণ্ডকালীন নিয়োগ দিয়ে পড়ানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এরমধ্যে শিখা খাতুন প্রতিবন্ধী শিশুদের গার্মেন্টস অ্যান্ড অ্যামব্রয়ডারি ও সাধারণ শিক্ষা দিচ্ছেন শিল্পী খাতুন।
স্কুলটির কারিগরি প্রশিক্ষক হেলেনা শবনম জানান, ঝিনাইদহ সরকারি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আবাসিক বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক, হাউজ প্যারেন্ট, সাধারণ শিক্ষক, হিয়ারিং এইড টেকনিশিয়ান ও কারিগরি প্রশিক্ষক পদে কোনো লোক নেই। ফলে সন্তানদের ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে কোনো আগ্রহ নেই অভিভাবকদের।
আরও পড়ুন: সরকার প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে নিয়েই দেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী: সমাজকল্যাণমন্ত্রী
তিনি আরও জানান, এই ঊর্ধ্বগতির দ্রব্যমূল্যের বাজারে শিক্ষার্থী প্রতি বরাদ্দ অপ্রতুল। প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ৩ হাজার টাকা। এই টাকায় নিয়ম মাফিকভাবে শিক্ষার্থীদের মাছ, মাংস ও ডিম খাওয়াতে হচ্ছে। একশ’ শিক্ষার্থী ভর্তি থাকলে প্রাপ্ত বরাদ্দ থেকে কিছুটা হলেও মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হতো বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা দুইজন বাবুর্চি, দুইজন নিরাপত্তা প্রহরী, একজন মালি ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৬ মাসেও বেতন পাননি। বেতন না পাওযায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ঢাকার গলফ সিকিউরিটি সার্ভিস তাদের নিয়োগ দিয়েছিল বলে জানান বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আবাসিক বিদ্যালয়য়ের বাবুর্চি আইয়ূব হোসেন ও শাহানাজ পারভীন।
প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী আসাদুজ্জামান বলেন, লোকবলের অভাবে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। অথচ পূর্ণাঙ্গভাবে জনবল নিয়োগ দিলে এই অঞ্চলের প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েরা আত্মনির্ভরশীল হতে পারত।
ঝিনাইদহ সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সচল রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রতিষ্ঠানটির লোকবলের জন্য প্রতিনিয়ত অধিদপ্তরকে চিঠি দিচ্ছি। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃতদের বেতনের জন্যও একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। হয়তো অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে।